Theatre Dunia

Theatre Dunia - Vol. - 13, Issue - 1, May 2025

₹ 360
SKU-0957

Quantity

থিয়েটার কেবল অভিনয়ের জায়গা নয়─এটি একটি ভাষ্য, একটি প্রতিবাদ, একটি সমাজদর্শন। বাদল সরকারের ‘থার্ড থিয়েটার’ হলো সেই ভাষ্যের চূড়ান্ত রূপ।  

বাদল সরকার কেবল ভারতীয় থিয়েটারের ইতিহাসে একটি নামই নন, তিনি ধ্রুপদী থিয়েটারে পরিবর্তনের প্রবর্তক। তাঁর ‘তৃতীয় থিয়েটার’ কোনও পৃথক নাট্যরীতি নয়, বরং বিকল্প সাংস্কৃতিক প্রতিরোধ চেতনার একটি পরিণত রূপ। এটি শিল্পের অন্তর্নিহিত সম্ভাবনাকে বাস্তবতার মুখোমুখি দাঁড় করানোর সেই সাধনা, যেখানে থিয়েটার সামাজিক দায়বদ্ধতার একটি বাহন হয়ে ওঠে। 

বাদল সরকারের নাট্যচিন্তা নাট্যচর্চার সীমা অতিক্রম করে এক ধরনের রাজনৈতিক সাংস্কৃতিক অনুশীলন হিসেবে আবির্ভূত হয়েছিল। তাঁর নাটকে, ‘আঙ্গিক’আর কেবল একটি নাট্য শৈলীকৌশল নয়,  বরং রাজনৈতিক অবস্থানের একটি ভাষ্য, শ্রেণীসচেতনতায় নির্মিত প্রতিরোধের কাঠামো। ‘প্রসেনিয়াম’ থেকে সরে আসার অর্থ কেবল নাট্যক্ষেত্রের রূপান্তরই নয়, বরং অভিনেতা-দর্শক সম্পর্কের পুনর্নির্মাণ, এবং নাটকের ভাষা, ছন্দ, চরিত্র এবং ঘটনা কাঠামোর আমূল পরিবর্তনও ছিল।    

যদিও তার রচনাগুলিকে ‘অ্যাবসার্ড’ বা ‘অস্তিত্ববাদী’ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে, তবুও সেগুলি নিছক ইউরোপীয় অস্তিত্ববাদী নাটকের অনুকরণ নয়। বরং, তিনি দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধ-পরবর্তী ইউরোপীয় শূন্যতার অভিজ্ঞতাকে ভারতীয় সমাজের সামাজিক-রাজনৈতিক বৈষম্য, দ্বন্দ্ব এবং দমন-পীড়নের নিরিখে আত্মস্থ করেছিলেন। ‘এবং ইন্দ্রজিৎ’, ‘যদি আর একবার’, ‘পাগলাঘোড়া’ মধ্যবিত্ত শ্রেণীর অস্তিত্বগত সংকটকে চিত্রিত করলেও, ‘মিছিল’, ‘বাসি খবর’, ‘ভোমা’ রাজনৈতিক নিপীড়নের বাস্তব অভিজ্ঞতা তুলে ধরে। 

বাদল সরকার তাঁর নাটকে যা সৃষ্টি করেন তা মূলত ‘বক্তব্য-ভিত্তিক নাট্যশিল্প’—যেখানে নাটকটি ‘নাটক হওয়ার জন্য নাটক’ নয়, বরং নাটকটি ‘কথা’ বলার, প্রতিবাদ করার, বাস্তবতার সামনে দাঁড়িয়ে উত্তরণের পথ দেখানোর জন্য। এই কারণেই তাঁর থিয়েটার ‘থিয়েটার ফর রিচার্জমেন্ট’ নয়, বরং ‘থিয়েটার ফর ট্রান্সফরমেশন’।    

তাঁর নাট্যচিন্তা নান্দনিকতার বিপরীতে রাজনৈতিক নৈতিকতার রূপ নেয়। দর্শকরা তখন আর নিছক থিয়েটার প্রেমী নন, বরং সামাজিক চেতনার একজন অংশগ্রহণকারীও হয়ে ওঠেন। নাটক এখানে সহমর্মিতার ভিন্নরূপ—অংশগ্রহণমূলক রাজনৈতিক চেতনার এক বহিঃপ্রকাশ। অতএব, তাঁর থিয়েটারে, অভিনেতা ও চরিত্রের বিভাজন, কাহিনির লিনিয়ারিটি, দৃশ্যের বিন্যাস, এমনকি ভাষা ─সবকিছুই চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হয়ে পড়ে।        

এই সংখ্যার মূল প্রতিপাদ্য হল বাদল সরকারের থার্ড থিয়েটার ধারণার তাত্ত্বিক এবং ব্যবহারিক কার্যকারিতা। আমরা তাঁর নাট্যভাষার অন্তরস্থ নৈতিক দৃষ্টিভঙ্গি, তাঁর শিল্প দর্শনের রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক প্রেক্ষাপট এবং তাঁর প্রস্তাবিত বিকল্প থিয়েটার কীভাবে সমসাময়িক সময়ে নতুন পাঠ এবং প্রয়োগের দাবি করে তা পুনর্বিবেচনা করার চেষ্টা করেছি। 

তাঁর থিয়েটার ছিল একটি বিপরীত ভাষ্য (counter-narrative)—এটি রাষ্ট্রের নীরবতা এবং দমন-পীড়নের বিরুদ্ধে একটি গণভাষা তৈরি করেছিল। তাঁর থিয়েটার দর্শকদের চিন্তাভাবনা, প্রশ্ন করার এবং সর্বোপরি সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণের জন্য আমন্ত্রণ জানায়─যেখানে থিয়েটার আর থিয়েটার থাকে না, হয়ে ওঠে জীবন। 

এই সংখ্যাটি এমন নাট্য অন্বেষণের জন্য উৎসর্গ করছি, যা প্রচলিত রীতিনীতির বাইরে গিয়ে জীবনের বাস্তবতার মুখোমুখি হয়। 

Reviews and Ratings

0 reviews
0.0

No reviews yet

5
0
4
0
3
0
2
0
1
0